স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system) এর রোগ সমূহ


স্নায়ুতন্ত্র, সংবেদনশীল রিসেপ্টর থেকে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল উদ্দীপনা সঞ্চালনের জন্য বিশেষ কোষের সংগঠিত গোষ্ঠী একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেখানে প্রতিক্রিয়া ঘটে সেখানে।

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system) এর রোগের কারণঃ

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system) এর রােগ হয় নানা কারণে। এইসব কারণের মধ্যে প্রধান হলাে—স্নায়ুর দুর্বলতা, ঠাণ্ডা লাগা, মদ্যপান, রাত জাগা, বদহজম, বাত, শ্লেষ্ম, পায়খানা না হওয়া, মাথায় বেশী রক্ত উঠে যাওয়া প্রভৃতি।

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system) এর রোগ সমূহ

  1. মাথা ধরা,
  2. মাথা ঘােরা,
  3. স্মৃতিশক্তি হ্রাস,
  4. ঘুম না হওয়া,
  5. মাথার চুল উঠে যাওয়া,
  6. মাথায় অত্যধিক রক্ত সঞ্চয়,
  7. হিষ্টিরিয়া, মৃগী রােগ,
  8. সন্ন্যাস রােগ,
  9. ধনুষ্টংকার প্রভৃতি

এসব রােগ যত সত্বর সম্ভব সারানাে দরকার, নতুবা বড় রকমের বিপদ ঘটে যাবার আশঙ্কা থাকে।

এই পোষ্ট এ স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system) এর রোগ সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

মাথা ঘােরার চিকিৎসাঃ

এটিকে রােগ না বলে রােগের উপসর্গ বলাই ভালাে। রােগীর মনে হয় তার চোখের সামনে সব কিছু ঘুরছে। তার দেহটিও দুলছে মনে হয়। বসে থাকার পর দাঁড়ালে বা দাঁড়ানাের পর বসলে মাথা ঘােরে, বমি বা বমি-বমি ভাব, ওপর দিকে তাকালেও মাথা ঘােরে। 

মাথা ধরার চিকিৎসাঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য, ঠাণ্ডা লাগা, মাথায় বেশী রক্ত উঠে যাওয়া, রাত জাগা, বদহজম, স্নায়ুর দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে এ রােগ হয়। মাথার মধ্যে সব সময় দপদপ করে, চোখে আলাে সহ্য হয় না, মাথার ডানদিতে, বেশী বেদনা।

আধকপালের চিকিৎসাঃ

কুপালের অর্ধেক অংশে বেদনা ও যন্ত্রণা বােধ হয়। ধাতুগত দোষ, প্রস্রাবের দোষ, কঠিন কায়িক বা মানসিক পরিশ্রম প্রভৃতি কারণে এ রকম হয়ে থাকে।

চুল উঠে যাওয়া

মাথার চুল উঠে যায় নানা কারণে। পেটের গােলমাল, কোনাে কঠিন রােগে দীর্ঘদিন ভোেগা, খুস্কি হওয়া, স্নায়বিক দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে চুল উঠে যায়। ব্যাপকভাবে চুল উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়। টাকের। টাকে নতুন করে চুল গজায় না। তাই চুল উঠতে শুরু করলেই চিকিৎসা করানাে দরকার। স্নানের পর মাথায় আনিকা তেল মাখলে চুল ওঠা বন্ধ হয়। নিয়মিত লবণ-চিনি-পাতিলেবুর শরবৎ খেলে চুল ওঠে না। ছােলা-বাদাম ভিজানাে, স্যালাড, টাটকা সুপক্ক ফল খেলেও চুল ওঠে কম। নিমকি-সিঙাড়া চানাচুর-তেলেভাজা বেশী খেলে চুল উঠতে শুরু করে। চুল উঠতে শুরু করলেই কেন উঠছে তা অনুসন্ধান করে লক্ষণ মিলিয়ে ওষুধ ব্যবহার করলে চুল ওঠা বন্ধ হতে পারে।

স্নায়বিক দুর্বলতাঃ

দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপান করা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, শুক্রক্ষরণ, রজঃস্রাব প্রভৃতি কারণে স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়। এ রােগ হলে বুক ধড়ফড় করে, মাথা ঘােরে, মানসিক অবসাদ, কাজে উদ্যমহীনতা, মুখে অরুচি, মেজাজ খিটখিটে প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। মদ্যপান-হেতু।

পক্ষাঘাতঃ

স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে অনেক সময় অঙ্গ অসাড় হয়ে পড়ে, পরে সেখানে দেখা দেয় পক্ষাঘাত। পক্ষাদা আক্রান্তস্থলে কোনাে স্নায়ু কাজ করে না ঐ স্থানটির কোনাে চেতনাও। প্রথম অবস্থা থেকে চিকিৎসা করানাে উচিত বিলম্বে রােগটা সারতে হতে সময় নেয়।

মৃগী রােগঃ

রােগীর মুখ দিয়ে ফেনা বা গাঁজলা ওঠে, খিচুনি দেখা দেয়, চিৎকার করে ওঠে ও শেষে জ্ঞান হারায়। এ অবস্থায় ঘাম হয়—ঘাম আঠা-আঠা মতাে, চোখের তারা ওপরে-নীচে ঘােরে, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে।

হিষ্টিরিয়া রােগঃ

এ রােগটা যুবতী মেয়েদেরই বেশী হয়। হাসা, কাদা, নাচা, আক্ষেপ, প্রলাপ, বিষণ্ণতা, অবসন্নতা, শ্বাসকষ্ট, মুছা প্রভৃতি এ রােগের লক্ষণ। পেট ফাপা, ঢেকুর ওঠা, রজঃস্রাবের গােলমাল, মাথার রােগ প্রভৃতি অন্যান্য লক্ষণ।

সন্ন্যাস রােগঃ

শরীরে রসরক্ত কম হলে, মাথায় জল জমলে, মাথায় রক্ত উঠলে এ রােগ দেখা দেয়। অজ্ঞান হয়ে পড়া, নাড়ী দ্রুত হওয়া, চোখের তারা একটি ছােট ও একটি বড় হওয়া, আক্ষেপ, বমি-বমি ভাব প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। এ রােগ হলে রােগীর উত্তেজনা বাড়ে এমন কিছু করা উচিত নয়। রােদের তাপ ও আগুনের তাপ থেকে সাবধান থাকতে হবে। নিয়মিত স্নান খাওয়া-ঘুম হওয়া দরকার। মদ্যপান, উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ করা অনুচিত। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে গরম জলের সেঁক দিতে হবে। রােগী মূছা গেলে সেখানে ভিড় করা উচিত নয়। রােগীর পরনের কাপড় আলগা করে দিতে হবে। যাতে গায়ে ও মাথায় ভালােভাবে হাওয়া লাগে তার ব্যবস্থা করা দরকার। মূৰ্ছাকালে মাথায় জলপটি দিলে বা বরফপূর্ণ আইসব্যাগ চাপিয়ে রাখলে উপকার হয়। হঠাৎ চিৎকার করে পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া, খিঁচুনি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।

ধনুষ্টংকার রােগঃ

রােগী ধনুকের মতাে বেঁকে যায় বলে রােগটার এমন নামকরণ হয়েছে। সামনের দিকেও বাঁকতে পারে, আবার পিছনদিকেও বাঁকতে পারে। সাধারণতঃ কোথাও কেটে গেলে বা আঘাত লাগলে এ রােগ হয়। গলায় বেদনা, ঘাড়ের আড়ষ্টতা, আক্ষেপ, চোয়াল বন্ধ হয়ে যাওয়া, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা এ রােগের লক্ষণ। রােগী কখনও কখনও অচৈতন্য হয়ে পড়ে, দেহ শক্ত হয়ে ওঠে, প্রবল তন্দ্রা-ভাব প্রভৃতিও এ রােগের অন্যান্য লক্ষণ। লক্ষণ ভালাে করে বুঝে তবে ওষুধ দেওয়া উচিত। রােগীকে তক্তাপােষ বা ঐরূপ কোনাে উঁচু জায়গায় শােয়ানাে ঠিক নয়–পড়ে গেলে বিপদ ঘটতে পারে। রােগীকে হালকা ধরনের তরল খাদ্য পথ্য হিসাবে দিতে হবে।

বেরিবেরি রােগঃ

এ রােগটা মূলতঃ রক্তাল্পতার কারণেই হয়ে থাকে। একেবার প্রথম অবস্থায় পায়ে খিল ধরে, পা ফুলে ওঠে, ফোলা স্থানে জ্বালা করে। পরে সারা শরীর ফুলে ওঠে। কোষ্ঠবদ্ধতা, পেটের অসুখ, গায়ের চামড়া শুকনাে, প্রস্রাব লাল প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় প্রভৃতিও এ রােগের লক্ষণ। এ ধরনের রােগীকে সঁতসেঁতে ঘরে রাখা অনুচিত—শুকনাে খটখটে ঘরে রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে আলাে-বাতাস ভালােভাবে চলাচল করা দরকার। রােগীর ঠাণ্ডা লাগানাে চলবে না। শক্ত বা কঠিন খাদ্য রােগীর পক্ষে ক্ষতিকর। টক-জাতীয় কোনাে খাদ্য বা পানীয় রােগীকে দেওয়া ঠিক নয়। হালকা ও পুষ্টিকর খাদ্য রােগীর উপযুক্ত পথ্য। বেদানার রস ও আনারসের রস এ রােগীর পক্ষে উপকারী। ঘােল, সাবু, বার্লি, দুধ প্রভৃতি তরল খাদ্য রােগীকে খাওয়ানাে দরকার।

স্নায়ুশূল রােগঃ

অনেক সময় শরীরের স্নায়ু আক্রান্ত হয়। এক বা একাধিক স্নায়ু আক্রান্ত হতে পারে। ঠাণ্ডা লাগা, আঘাত লাগা, বদহজম, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে এ রােগ হয়। আক্রান্তস্থলে কিছু ফুটে যাওয়ার মতাে ব্যথা হয়, জ্বালা করে। এই জ্বালা অসহ্য হয়ে ওঠে অনেক সময়। আক্রান্তস্থলে কিছু ঠেকলে টন-টন করে ওঠে। স্থানটি গরম হয়ে ওঠে, লালমতাে হয়। প্রতিদিন একই সময়ে বেদনা হতে পারে, আবার বেদনাটা সব সময়েও হতে পারে। চিকিৎসায় বিলম্ব করা উচিত নয়, তাহলে আক্রান্ত স্নায়ুর আশেপাশের স্নায়ুসমূহও আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।

দুঃস্বপ্ন রােগঃ

মানুষ নানা রকম স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নও হতে পারে। রক্ত সঞ্চয়ের জন্য বা আহার জনিত কারণে এই দুঃস্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের মধ্যে মনে হয় যেন ভারী পাথর বা ঐ ধরনের কিছু জিনিস বুকের ওপর চাপানাে রয়েছে তাই সে নড়াচড়া করতেও পারছে না। এ সময় নানা রকম স্বপ্ন দেখে কখনও ভয় পায়, কখনও চিৎকার করে, কখনও বা গোঁ – গোঁ করে। ঘুম ভাঙলেও সেই মুহূর্তে ভয় কাটে না, গলা শুকিয়ে যায়। রােগটিকে জিইয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ওষুধ খাইয়ে রােগীকে এ ধরনের স্বপ্ন দেখার হাত থেকে রক্ষা করা উচিত।

ঘুম-না-হওয়া রােগঃ

ঘুম যথা নিয়মে না হওয়া একটি মারাত্মক রকমের রােগ। অনেকেই এ রােগটাকে অবহেলা করেন বা এড়িয়ে যান। কিন্তু এ রকম হলে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। কিছুদিন এভাবে চললে কোনাে কঠিন রােগ আক্রমণ করে বসতে পারে। তাহলে কিন্তু রীতিমত খেসারত দিতে হবে। সাধারণতঃ অতি ভােজন, অধিক মদ্যপান, উত্তেজক আহার গ্রহণ, অতিরিক্ত চা-কফি পান, মাথায় রক্তের চাপ বৃদ্ধি, উপবাস, মানসিক উত্তেজনা প্রভৃতি কারণে এ রকম হয়ে থাকে। এমন হলে রােগী দুর্বল হয়ে পড়ে, কর্মক্ষমতা কমে যায়, কাজের উদ্যম নষ্ট হয়, শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে ধরনের হয়ে পড়ে। চিকিৎসায় এ রােগ সারানাে যায়। যে সব কারণে এ রােগ হয়—অর্থাৎ চা-কফি পান, মদ্যপান, অতি ভােজন প্রভৃতি বন্ধ করা দরকার। শােবার আগে হাত-পা ঠাণ্ডা হলে ভালাে করে ধুয়ে এবং ঘাড়ে-কপালে জলের ছিটে দিয়ে ভালাে করে মুছে ও এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল পান করে শুলে উপকার হয়। মাঝে মাঝে ডাবের জল, ঘােলের শরবৎ প্রভৃতি খাওয়া দরকার।

মাথায় রক্তসঞ্চয় রোগঃ

গলার ও মাথার শিরা ফুলে ওঠে। তার ফলে দেখা দেয় মাথার রােগ, দুর্বলতা, অস্থিরতা, মাথার যন্ত্রণা প্রভৃতি। এ অবস্থায় চোখ দুটি হয়ে ওঠে লাল। কানের ভেতর গুনগুন শব্দ হয়, চোখে দেখা যায় জোড়া জিনিস প্রভৃতি লক্ষণও দেখা দেয়। আঘাত, ভয়, রাগ, উত্তেজনা প্রভৃতিই এ রােগের কারণ।

মস্তিষ্কের আবরক ঝিল্লি প্রদাহঃ

উত্তেজনা, অবসন্নতা, মাথায় প্রচণ্ড রােদ লাগা বা আগুনের তাপ লাগা প্রভৃতি কারণে এ রােগ হয়। এ রােগের লক্ষণ—জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, বমি বা বমি-বমি ভাব, নিদ্রাহীনতা, ঘুমন্ত অবস্থায় নানা রকম স্বপ্ন দেখা ও চিৎকার করে ওঠা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি। রােগী প্রলাপ বকে অনেক সময়। জ্বর কখনও কখনও প্রবল আকার ধারণ করে থাকে। রােগীর প্রচণ্ড পিপাসা দেখা দেয়। কখনও-বা মৃত্যুভয়ও দেখা দেয়।

স্মৃতিশক্তি হ্রাস রােগঃ

মাথায় অধিক রক্ত-সঞ্চয়, কঠিন রােগভােগ, প্রচণ্ড আঘাত পাওয়া, শরীরের রস-রক্ত কমে যাওয়া প্রভৃতি কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। অধিক দিন বিনা চিকিৎসায় থাকার ফলে স্মৃতিশক্তি লােপ পেতে পারে। প্রথম থেকেই এ রােগের চিকিৎসা করা দরকার। প্রথমে চিকিৎসককে অনুসন্ধান করে জানতে হবে রােগটার উৎস কোথায় অর্থাৎ কেন এ রােগ হলাে। কারণ জানতে পারলে লক্ষণ মিলিয়ে ওষুধ খাওয়ালেই রােগ সেরে যাবে—রােগীর স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

স্নায়ুতন্ত্র রোগ এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

রােগের সঠিক লক্ষণ বিচার করে তবে ওষুধ দেওয়া উচিত। লক্ষণের সঙ্গে না মিললে সে-ওষুধ দেওয়া ঠিক নয়। তাহলে অযথা সময় নষ্ট হবে—কাজের কাজ কিছুই হবে না। 

তথ্যসুত্রঃ nervous system


0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x